দেশের প্রধান বিরোধী দলের ডাকা অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব
পড়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেনে। অবরোধকে কেন্দ্র করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়
বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিক লেনদেনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান
শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমেছে ৩০ শতাংশ। তবে অধিকাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে
প্রধান মূল্যসূচকে বাড়তি কিছু পয়েন্ট যোগ হয়েছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক
এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একই অবস্থা লক্ষ করা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর। দ্রুত মুনাফার আশায় স্বল্প
মূলধনি দুর্বল কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীর ঝোঁক বেড়েছে। গত সপ্তাহে স্বল্প মূলধনি এসব
শেয়ারের দর বেড়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। পাশাপাশি বড় মূলধনি কোম্পানি হিসাবে পরিচিত ব্যাংকিং
খাতের শেয়ারের দর বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। যদিও আগের সপ্তাহে ব্যাংকসহ
অধিকাংশ শেয়ারের দর কমায় ডিএসই ব্রড ইনডেক্সটির বড় পতন হয়েছিল।
গত সপ্তাহের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের সপ্তাহের দরপতনের ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের প্রথম দিন উভয়
শেয়ারবাজারে সূচকের পতন হয়। তবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে সম্ভাব্য ক্ষতির বিপরীতে
মার্চেন্ট ব্যাংক, স্টক ডিলার ও স্টক ব্রোকারের
সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে আরো এক বছর সময় বাড়িয়ে দেয়ার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়
বাজারে। এর ফলে পরবর্তী দুই দিন সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা
যায়। কিন্তু নির্বাচন
ঘিরে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে সূচক কমে যায়। যদিও সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান
মূল্যসূচকটি ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে প্রায় ৬০ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে
ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বেড়ে ৪২৭৭ পয়েন্টে
দাঁড়ায়। আগের সপ্তাহে এ সূচক ১৬৫ পয়েন্ট হারিয়েছিল। তবে ডিএসই ৩০ সূচকটি আগের
সপ্তাহের চেয়ে ৫ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট কমে যায়। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক আগের
সপ্তাহের চেয়ে ১৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ১৩২৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে প্রধান বিরোধী দলের ডাকা অবরোধে রাজনৈতিক
পরিস্থিতির অবনতি ও এরশাদের নির্বাচন বয়কটের ঘোষণায় নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এতে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার
পাশাপাশি অবরোধে সহিংসতা বাড়ায় স্বাভাবিক যান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটে। ফলে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক
লেনদেন কমে যায়। গত সপ্তাহে ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ২ হাজার ১৪৩ কোটি
টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯৩৯ কোটি
টাকা কম। দৈনিক গড় লেনদেন আগের সপ্তাহে ৬১৬ কোটি টাকা হলেও গত
সপ্তাহে তা ৪২৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৭৮ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯২ কোটি টাকা কম।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বিভিন্ন খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জীবন বীমা কোম্পানির শেয়ারদর। এ খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ
ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে পুরো খাতটিতে গড়ে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ দর বেড়েছে। দর বৃদ্ধির পরবর্তী তালিকায়
রয়েছে স্বল্প মূলধনি দুর্বল কোম্পানির শেয়ার। গত সপ্তাহে গড়ে এসব কোম্পানির
শেয়ারদর ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির
মধ্যে ছয়টিই ছিল দুর্বল মৌলভিত্তির স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। এছাড়া আগের সপ্তাহের দরপতনের
ধারা কাটিয়ে গত সপ্তাহে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছিল ব্যাংক খাত। গত সপ্তাগে গড়ে এ খাতের শেয়ারের
দর বেড়েছে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বিপরীতে গত সপ্তাহে জ্বালানি খাত সামান্য দর হারিয়েছে।
এদিকে কয়েক মাসের মতো গত সপ্তাহেও লেনদেনের শীর্ষস্থান
ধরে রেখেছে বস্ত্র খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৩ শতাংশ হয়েছে এ খাতের। এছাড়া ডেল্টা লাইফ
ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন বাড়ায় দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে জীবন বীমা কোম্পানি। গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২
শতাংশ এসেছে এ খাত থেকে। এর মধ্যে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে লেনদেন হয়েছে ২০২ কোটি
টাকা, যা গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯৫টি কোম্পানি ও
মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৬টির, কমেছে ৯৭টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে ৮৩ শতাংশ
শেয়ার দর হারিয়েছিল। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ২৪১টি
কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৫টির, কমেছে ৭৯টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির।
গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষস্থানে থাকা
কোম্পানিগুলো হচ্ছে— ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, আরএন স্পিনিং, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, বেঙ্গল উইন্ডসর, আরগন ডেনিমস, যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও সেন্ট্রাল
ফার্মাসিউটিক্যালস।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে— রহিমা ফুড, অ্যারামিট সিমেন্ট, বিডি অটোকারস, রংপুর ফাউন্ড্রি, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জেএমআই সিরিঞ্জ, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার, লিগ্যাসী ফুটওয়্যার, লিবরা ইনফিউশন ও ফাইন ফুডস লিমিটেড।
দর হ্রাসের শীর্ষে থাকা প্রধান ১০ কোম্পানি হচ্ছে— মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা অয়েল, ঢাকা ডায়িং, এনভয় টেক্সটাইল, জিপিএইচ ইস্পাত, স্ট্রাইলক্রাফট, মেট্রো স্পিনিং, সায়হাম কটন মিলস, সায়হাম টেক্সটাইল ও শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড।