শেয়ারবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত
প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে
বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। থিউরিটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্ট দরের চেয়ে বেশি দরে শেয়ার
লেনদেন হওয়ার কারণেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ অভিযোগ উঠেছে। আর ঘোষিত বোনাস শেয়ার ফ্রি করতেই
এ কারসাজি করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। এতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষও জড়িত বলে ধারণা করছেন তারা।
বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা
অভিযোগ করছেন, গত কিছু দিন থেকেই এ শেয়ারটি
নিয়ে কারসাজি করছে বলে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিনিই শেয়ারটি ‘টপ টেন’র এক নম্বর থেকে তিন নম্বরের
মধ্যেই অবস্থান করছে। কারসাজি চক্র জড়িত না থাকলে এভাবে শেয়ারটির লেনদেনে
উল্লম্ফন হতে পারে না। এ কারসাজির সাথে কোম্পানির লোকজন সরাসরি জড়িত বলে তারা
অভিযোগ করছেন।
রেকর্ড ডেটের আগের
কার্যদিবসে ৬৭.৫০ টাকা এবং পরের কার্যদিবসে ৬৬.১০ টাকায় স্থির হয়েছে কোম্পানির
শেয়ার দর। মাত্র এক কার্যদিবসের ব্যবধানে কোম্পানির বোনাস শেয়ার
প্রায় ফ্রি হয়ে গেছে। আর তালিকাভুক্তির পর এ কোম্পানির শেয়ার দর সর্বোচ্চ ৬৯.৪০
টাকায় উঠেছে। আর ৩.৩০ টাকা বাড়লে সর্বোচ্চ দরের ক্রেতারাও বোনাস
ফ্রি হয়ে যাবেন। অর্থাৎ যে দরে শেয়ার কিনেছেন সে দরেই বিক্রি করতে
পারবেন। মাঝখানে বোনাস শেয়ারগুলো ফ্রি পাবেন। কারসাজির কারণে এ ধরনের
প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছে- এমন দাবি বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের।
কোম্পানিটি গত ৩০ জুন
২০১৩ অর্থবছরের জন্য ১২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। গত ১২ ডিসেম্বর কোম্পানির
বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ছিল। এর আগের দিন এ কোম্পানির শেয়ার
দর ছিল ৬৭.৫০ টাকা। অর্থাৎ থিউরিটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্টে কোম্পানির শেয়ার
দর ৬০.৩০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু অ্যাডজাস্টমেন্টের পরের কার্যদিবসে এর লেনদেনই
শুরু হয় ৬৫ টাকা থেকে। অর্থাৎ শেয়ার দর ৬০.৩০ টাকা হলেও তা লেনদেন হয়েছে ৬৫ টাকায়।
সার্কিট ব্রেকারের
সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেও লেনদেন শেষে আগের দিনের তুলনায় দর কমেছে। থিউরিটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্ট
হয়ে দর ও বিক্রেতা কমলেও লেনদেন হয়েছে ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫০টি শেয়ার। দর কমার পরও বড় অঙ্কের শেয়ার
লেনদেন হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই কম দরে এ শেয়ার বিক্রি
করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
একটি কোম্পানির
শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করলে সাধারণত আগের দিনের তুলনায়
দর বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার নিয়ে ঘটেছে
ভিন্ন ঘটনা। মূলত রেকর্ড ডেট তথা থিউরিটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্টের
কারণে এমনটি হয়েছে। এদিন এ কোম্পানির শেয়ারের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ
সীমা ছিল ৬৬.২০ টাকা। আর আগের কার্যদিবসে কোম্পানির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৬৭.৫০
টাকা। তাই ৬৬.২০ টাকা দরে
শেয়ার লেনদেন হলেও আগের দিনের চেয়ে কম দরে লেনদেন হয়েছে।
রেকর্ড ডেটের পরের
কার্যদিবসে লেনদেনের এক পর্যায়ে এ শেয়ারের দর ৬৬.১০ টাকায় উঠে যায়। অর্থাৎ মাত্র এক কার্যদিবসের
ব্যবধানে কোম্পানির বোনাস প্রায় ফ্রি হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা
বিষয়টিকে অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন। ইতিমধ্যে কোম্পানির পিই রেশিও ২০.২১ হয়েছে।
কোম্পানিটির সর্বশেষ কার্যদিবসের
লেনদেন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এদিন কোম্পানির শেয়ারের ওপেন
প্রাইস ছিল ৬৫ টাকা আর সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৬৬.২০ টাকা। এদিন ৬২.৭০ থেকে ৬৬.২০ টাকায়
লেনদেন হয়ে সর্বশেষ দর দাঁড়ায় ৬৬.১০। এর আগের কার্যদিবসে এ শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৬৭.৫০ টাকা। সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ
সীমা স্পর্শ করেও আগের কার্যদিবসের তুলনায় শেয়ার দর কমেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের
মতে, ওপেন প্রাইস বা প্রথম লেনদেন কে করেছে, তা বের করা খুব সহজ। আর তা খতিয়ে দেখলেই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব হবে। একটি কোম্পানির শেয়ার অ্যাডজাস্ট
হয়ে ৬০.৩০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও প্রথমে সেটি ৬৫ টাকায় কেনার ফলেই তার ওপেন প্রাইস
হয়েছে ৬৫ টাকা। এখন এ দরে কে এবং কেন এ শেয়ার কিনেছে তা বের করতে
নিয়ন্ত্রক সংস্থার খুব বেগ পেতে হবে না। বিষয়টি খতিয়ে কারণ উদঘাটন করে বিনিয়োগকারীদের সঠিক তথ্য
প্রদান করা প্রয়োজন। চোখের সামনে এ ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে
বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিও আস্থা হারিয়ে
ফেলবে।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন