পাওয়ার গ্রিডের আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি পেয়েছে অডিট প্রতিষ্ঠান
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে অডিট প্রতিষ্ঠান। ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের প্রতিবেদনে এ অসঙ্গতি ধরা পড়ে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, কোম্পানির নিরীক্ষক ৩০ জুন ২০১৩ সমাপ্ত বছরের জন্য প্রস্তুতকৃত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে নিম্নোল্লিখিত 'কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন' অনুচ্ছেদ প্রদান করা হয়েছে। এতে বলা হয়, উদ্বৃত্তপত্রে বর্ণিত স্থায়ী সম্পদের লিপিবদ্ধকৃত মূল্য ৪ হাজার ২১১ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৫ টাকা। কোম্পানি স্থায়ী সম্পদের হিসাব বহি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (ডেসা) থেকে স্থানান্তরিত যন্ত্রপাতির মূল্যায়ন যথাযথভাবে করা হয়নি। এছাড়া ৩০ জুন ২০১৩ তারিখ অথবা নিরীক্ষা বছরের যে কোনো সময়ে স্থায়ী সম্পদের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে স্থায়ী সম্পদের অস্তিত্বের সত্যতা এবং মূল্য যাচাই করার জন্য তাদের কাছে বাস্তবসম্মত বিকল্প কোনো নিরীক্ষা পদ্ধতি ছিল না। বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বিএএস) ৩৬ অনুযায়ী স্থায়ী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করতে হবে এবং সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় বর্ণনা দিতে হবে।
স্থায়ী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করার বিষয়ে কোম্পানির কোনো লিখিত নীতিমালা নেই এবং ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করা হয়নি। সম্পদ মূল্যায়ন করার জন্য কোম্পানি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্মের সেবা গ্রহণ করছে, যা এখনো চলমান। আর্থিক প্রতিবেদনের নোট নং- ৫ এ উল্লেখ আছে যে, কোম্পানির বর্ণিত ক্যাপিটাল ওয়ার্ক-ইন-প্রোগ্রেস ৪ হাজার ৮৫১ কোটি ৩৩ লাখ ৩ হাজার ৪৪২ টাকা, যার মধ্যে ৫টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। যার পরিমাণ ৮৪ কোটি ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ১৭৯ টাকা। সম্পন্ন প্রকল্পগুলো অপারেশনে এসে রাজস্ব আয় করলেও স্থায়ী সম্পদে স্থানান্তর করা হয়নি। ফলে কোম্পানি এসব প্রকল্পের জন্য ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ লাখ ৫৬৩ টাকার অপচয় কম দেখিয়েছে। যে কারণে ২০১২-১৩ সালে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বেশি দেখিয়েছে।
অন্যদিকে আর্থিক বিবরণীর নোট-৬ অনুযায়ী কোম্পানি ইনভেন্টরি খাতে দেখিয়েছে ১৬৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৩ টাকা। অডিট ফার্মের পরিদর্শনকৃত কস্ট সেন্টারগুলোতে ইনভেন্টরি হিসাব যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। যে কারণে ইনভেন্টরির বাস্তব অস্তিত্বের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে ইনভেন্টরির বাস্তব অস্তিত্ব এবং মূল্য যাচাই করার জন্য ফার্মের কোনো বিকল্প নিরীক্ষা প্রক্রিয়া ছিল না। কিন্তু সম্পদ মূল্যায়ন করার জন্য কোম্পানিটি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্মের সেবা গ্রহণ করে আসছে।
অডিট প্রতিষ্ঠানটি আরো উল্লেখ করে, ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে অবশিষ্ট ঋণের ওপর মুদ্রা বিনিময় হারের ওঠানামাজনিত আয় ৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার ৫০৮ টাকা, যা লাভ-লোকসান হিসাবে লিপিবদ্ধ করার পরিবর্তে স্থায়ী সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড ২১-এর প্যারাগ্রাফ ২৮ অনুযায়ী মুদ্রা বিনিময় হারের ওঠানামাজনিত আয় লাভ-লোকসান হিসাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোম্পানি ২০১০-২০১১ সাল থেকে মুদ্রা বিনিময় হারের ওঠানামাজনিত আয়/ক্ষতি মূলধনীকরণ অথবা স্থায়ী সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে দেখানোর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তা বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড ২১-এর সংশ্লিষ্ট ধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
আর্থিক বিবরণীর নোট ৭ অনুযায়ী ট্রান্সমিশন/হুইলিং এবং অপটিক্যাল ফাইবার চার্জবাদ রিসিভঅ্যাবল বাবদ ১২৭ কোটি ৮৭ লাখ ৩২ হাজার ১৫২ টাকা লিপিবদ্ধ করেছে। এর মধ্যে ডিপিডিসির ২৯ কোটি ৬২ লাখ ৩১ হাজার ৬২ টাকা, ডেসকোর ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬৪৮ টাকা এবং ডব্লিউজেডপিডিসিএলের কাছে ৮ কোটি ৮৪ লাখ ২ হাজার ৪৯৮ টাকা পাওনা রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে হুইলিং চার্জ বিলের বিপরীতে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ খুব কম হওয়ার কারণে ২০০৮ সালের জুন মাস থেকে ডিপিডিসির কাছে পাওনার পরিমাণ ১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ টাকা দেখানো হচ্ছে। ২০০৮ সালের জুন-পরবর্তী সময়ে ডিপিডিসি থেকে হুইলিং চার্জ বিলের বিপরীতে কম গ্রহণ করার কারণে ডেসার কাছে পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯৮ টাকা। ডেসকোর কাছে পাওনার পরিমাণ ২০০৭ সাল থেকে ৩১ লাখ ৬ হাজার ২৩০ টাকা দেখানো হয়েছে। ডব্লিউজেডপিডিসিএলের কাছে পাওনা ২০০৭ সাল থেকে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ১০ টাকা দেখানো হয়েছে। ডেসার কাছে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত বাবদ রিসিভঅ্যাবল ২০১০ সাল থেকে ১০ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার ১৪ টাকা দেখানো হয়েছে। ভারতভিত্তিক আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং ডেসার কাছে পাওনা বাবদ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত চার্জ রিসিভঅ্যাবলের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে; কিন্তু কোম্পানি বিতর্কিত এ পরিমাণের জন্য সঞ্চিতি রাখেনি।
অডিট প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে মতামতে জানায়, কোম্পানি বিতর্কিত অন্যান্য পাওনাও পুরোপুরি আদায় করতে পারবে না। উল্লিখিত পরিমাণের জন্য সঞ্চিতি রাখলে ২০১২-১৩ সালের শেয়ারপ্রতি আয় কম হতে পারতো।
আর্থিক বিবরণীর নোট নং- ১৯ অনুযায়ী বিপিডিবি কোম্পানির কাছে অন্যান্য অর্থায়নের জন্য পাওনা ৩৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং নোট নং- ১৯.৪ অনুযায়ী ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে অন্যান্য অর্থায়নের জন্য দায় বাবদ চলতি হিসাবে ১০ কোটি ৪০ লাখ ৩২ হাজার ৪২১ টাকা অন্তর্ভুক্ত আছে। এ সংক্রান্ত দেনার মধ্যে বিপিডিবির কাছে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮৮ টাকা এবং প্রকল্প-১ এ (২৪ লাখ ২২ হাজার ৫৬৭) টাকা রয়েছে। নোট নং- ১২.৩, নোট নং- ১২.৪ (এ) এবং নোট নং- ১৬ অনুযায়ী পিজিসিবিএলের কাছে বিপিডিবির পাওনার পরিমাণ ৮০ লাখ ৩ হাজার ৬৭০ টাকা, ৯৮৫ কোটি ৫৬ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩ টাকা এবং ৮৮ কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা; কিন্তু বিপিডিবি থেকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি বলে প্রতিষ্ঠানটি মন্তব্য করে।
অন্যদিকে আর্থিক বিবরণীর নোট ১৪ অনুযায়ী কোম্পানির গ্র্যাচুইটি স্কিমটি আনফান্ডেড এবং কোম্পানির নীতি অনুযায়ী সঞ্চিতি রাখা হয়েছে। কিন্তু বিএএস ১৯ অনুযায়ী অ্যাকচ্যুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন করা হয়নি বলে অডিট রিপোর্টে জানানো হয়।
Tags:
All,
Power and Fuel,
Share Market News
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন