খুব শীগগিরই
যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত
ঘোষণা করতে যাচ্ছে ওবামা প্রশাসন। দেশের পোশাক শিল্পে সাম্প্রতিক ধারাবাহিক শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনার
প্রতীকী প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এ পদক্ষেপ আসতে যাচ্ছে বলে
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অন্যান্য সরকারি
সংস্থার সহায়তায় বর্তমানে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় খসড়াও তৈরি করছে
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রেড রিপ্রেজিন্টিটিভস অফিস’ । চলতি জুন
মাস শেষ হওয়ার আগেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।
যদিও এ সুবিধা প্রত্যাহার
করে নেওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বর্তমান রপ্তানির ১ শতাংশও ক্ষতিগ্রস্ত
হবে না, তারপরও এ সুবিধা
প্রত্যাহার না করতে দেশটির সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
অবশ্য
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শ্রম সংগঠন এএফএল-সিআইও অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের
ক্ষেত্রে ইউএস জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (ইউএস জিএসপি) সুবিধা বাতিলের
আহবান জানিয়ে আসছিলো। এমনকি ২০০৭
সালে তারা এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি আবেদনও করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র
সরকার বিষয়টি গত ছয় বছর ধরেই ঝুলিয়ে রেখেছে। তাদের ধারণা ছিলো বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের হুমকিই শ্রম আইন
সংস্কারে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করার ব্যাপারে যথেষ্ট। কিন্তু তাজরীন ও রানা
প্লাজার ঘটনার পর আইন প্রণেতা ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপে অবশেষে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন ওবামা । এএফএল-সিআইও’র কর্মকর্তা সেলেসতে ড্রেক চলতি সপ্তাহে
রয়টার্সকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশের
সুবিধার মাধ্যমে অনুন্নত দেশগুলোতে চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির চেষ্টাই ছিলো জিএসপি
পদ্ধতির উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশ ১৯৭৬
সাল থেকে জিএসপি সুবিধা ভোগ করে আসলেও বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত পোশাক শিল্প এ
সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তবে
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার পোশাক শিল্পকেও জিএসপির আওতায় আনার প্রস্তাব
করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন আইন প্রণেতা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের
টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদকদের চাপের মুখে ভেস্তে যায় তাদের এ উদ্যোগ।
৮০’র
দশকে জিএসপি সুবিধার পূর্বশর্ত হিসেবে শ্রম-অধিকার সংযুক্ত হওয়ার পর থেকে এ
পর্যন্ত ১৩ দেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জিএসপি
সুবিধা বাতিল প্রসঙ্গে ড্রেক বলেন, বাংলাদেশের
পোশাক রফতানি হয়তো এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু যে সব
প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা শ্রম পরিবেশ উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ
সৃষ্টি করবে।
তবে এ ধারণার সঙ্গে
দ্বিমত পোষণ করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্টার ফর সাউথ এশিয়া
স্টাডিজের সহযোগী পরিচালক সনচিতা সাক্সেনা। তিনি বলেন, জিএসপি
প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের অবস্থার পরিবর্তন হবে না। সত্যিই অবস্থার
পরিবর্তন চাইলে আন্তর্জাতিক ব্রান্ড এবং এনজিওগুলোর উচিত বাংলাদেশের পোশাক
কারখানার শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা করা।
একই সঙ্গে
বাংলাদেশের পোশাক কারখানার পরিবেশ উন্নয়নে নজরদারির জন্য প্রণীত আন্তর্জাতিক
উদ্যোগে ইউরোপীয় খুচরা বিক্রেতাদের মত যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা ব্রান্ডগুলোকেও যোগ
দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন