পুঁজিবাজারে
বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবর্হিভূত সিকিউরিটিজের মূলধন,
মূলধনী
লাভ, লভ্যাংশ ইত্যাদি প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মতামত দিয়েছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১৩ মে
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ
নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতামত দেয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক জগন্নাথ চন্দ্র
ঘোষ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বৈদেশি
মুদ্রা লেনদেন নীতিমালা-২০০৯ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে পুঁজিবাজারে
তালিকাভুক্ত এবং তালিকাবর্হিভূত সিকিউরিটিজের মূলধন, মূলধনী
লাভ, লভ্যাংশ ইত্যাদি প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিএসইসির ১৪ দফা
সুপারিশের প্রেক্ষিতে এ মতামত দেয়া হলো।
চিঠিতে বিএসইসি’র প্রণীত ৪ নম্বর সুপারিশের
পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,
তালিকাভুক্ত
কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যাবাসন সুবিধা আগাম অনুমোদনের প্রয়োজন
নেই। কিন্তু তালিকাভুক্ত কোম্পানি না হলে
আগে থেকে অনুমোদন লাগবে। যেহেতু তাদের
কোনো মার্কেট নেই।
এছাড়া করারোপের বিষয়ে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত
ও তালিকাবর্হিভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে করারোপ ও প্রত্যাবাসন সুবিধা এবং ব্যক্তি
বিদেশি বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশের ওপর কর হ্রাস করা হলে রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে
নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যা
বিদ্যমান বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতিমালার পরিপন্থীও।
বিএসইসি’র ৬ নম্বর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বলা
হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে মূলধনী আয়,
লভ্যাংশ,
সুদ,
ওপেন-অ্যান্ড
বা মেয়াদহীন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে প্রত্যাবাসন সুবিধা নন রেসিডেন্ট ইনভেস্টরস টাকা
অ্যাকাউন্ট (এনআইটিএ) লেনদেনের ক্ষেত্রে বহাল রয়েছে।
এছাড়া আরো বলা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিদেশি বিনিয়োগের
জন্য উন্মুক্ত। শেয়ার ইস্যুর
মাধ্যমে যেন বৈদেশিক মুদ্র ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সহজেই আনা যায় সে বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। তবে শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা
অবশ্যই টাকায় রূপান্তর করতে হবে।
প্রবাসী, প্রাইভেট বা পাবলিক লিমেটেড কোম্পানি (শেয়ারবাজারে
তালিকাভুক্ত নয়), দেশি থেকে প্রবাসী,
প্রবাসী
থেকে দেশি, প্রবাসী থেকে প্রবাসীদের শেয়ার ইস্যু
ও হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিয়োগ বিভাগকে অবশ্যই ১৪ দিনের
মধ্যে অবগত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামতে আরো বলা হয়, এক
প্রবাসী অন্য প্রবাসীর কাছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের
ক্ষেত্রে ব্যাংকিং নিয়ম-নীতি মেনে চলা হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতির
দরকার হবে না।
এছাড়া চিঠিতে বিএসইসির ৮ নম্বর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে,
বাংলাদেশ
ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিয়োগের এডি শাখার অনুমতি ছাড়া স্থানীয় ব্রোকারেস হাউজে এ
ধরনের লেনদেনের অনুমোদন রয়েছে। তবে
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক এডি বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে যে সংশ্লিষ্ট
কোম্পানি ওই বিদেশি ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধি।
গত মাসে বিএসইসি’র সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে একটি
বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স
অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ। তিনি বলেন, এছাড়া
বিএমবিএ সদস্যরা বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে কিছু সুপারিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএসইসি’র
কাছে শিগগিরই এসব সুপারিশ জমা দেয়া হবে।’
জানা যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১২ কমিশনের ৪৬২তম
সভায় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন, কমিশনের
নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও পরিচালক মাহবুবুল আলম। কমিটি চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত ১৪টি
সুপারিশ কমিশনে জমা দেয়।
সুপারিশগুলো হলো-
১. মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে (পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিদেশি ও প্রবাসী
বাংলাদেশিদের কাছে তাদের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা সেবা দেয়ার পাশাপাশি সিকিউরিটিজ
কাস্টডিয়াল সার্ভিসের অনুমোদন দেয়া যেতে পারে।
২. সময়োপযোগী বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পেশাগত তথ্য সেবা
প্রদান ও অনলাইনে সঠিক তথ্য প্রদানে মার্চেন্ট ব্যাংকার ও স্টক ব্রোকারদের পৃথক
গবেষণা বিভাগ গঠন করতে হবে।
৩. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বন্ড মার্কেট,
এসএমই
মার্কেট, ইসলামিক মার্কেট ও ডেরিভেটিভ
মার্কেটের মতো পৃথক বাজার গঠন করতে হবে।
৪. করারোপ ও প্রত্যাবাসন সুবিধার জন্য তালিকাভুক্ত নয় এমন বন্ড,
অ্যাসেট
ব্যাকড সিকিউরিটিজ, ওপেন-অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের
ইউনিট তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ হিসাবে গণ্য করা। এছাড়া ব্যক্তি বিদেশি বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশের ওপর
কর হ্রাস করা যেতে পারে।
৫. বাংলাদেশে কর্মরত প্রতিষ্ঠিত বহুজাতিক কোম্পানির অন্তুর্ভুক্ত বিদেশি
ব্যাংক, রপ্তানিমুখী স্থানীয়, বিদেশি
মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে (ইপিজেডের কোম্পানিসহ) শেয়ারবাজারে
তালিকাভুক্তির ব্যাপারে উৎসাহিত করা যেতে পারে। এটার জন্য তাদেরকে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে
আর্থিক প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে।
৬. নিবন্ধিত বেসরকারি কোম্পানি বা যৌথ মূলধনী কোম্পানিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত
করতে প্রচলিত কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর সংশোধন বা সংযোজন বা
পরিমার্জন করা যেতে পারে। তালিকাবর্হিভূত
কোম্পানির ক্ষেত্রে মূলধনী আয়, লভ্যাংশ,
সুদ,
ওপেন-অ্যান্ড
বা মেয়াদহীন মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং তালিকাবর্হিভূত বন্ডের ক্ষেত্রে প্রত্যাবাসন
সুবিধা দেয়া যেতে পারে।
৭. সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোকে বিদেশি ফান্ড (তহবিল) ও বিদেশি পেনশন
ফান্ড ব্যবস্থাপনা করার অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
৮. দেশিয় ব্রোকারেজ হাউস/পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট/ফান্ড ম্যানেজমেন্টকারীদের
সঙ্গে বিদেশি স্টক ব্রোকার/ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার্স বা ফান্ড ম্যানেজার্সের শেয়ার
লেনেদেনে অনুমোদন দেয়া যেতে পারে।
৯. বিদেশি
বিনিয়োগ বাড়াতে নিরীক্ষক ও আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা বাড়াতে গুরুত্ব দিতে হবে।
১০. সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে ধারণা দিতে মার্চেন্ট ব্যাংকার,
স্টক
ব্রোকার ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে ফাইন্যান্সিয়াল এডুকেশন বিভাগ গঠন কতে হবে।
১১. নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও
প্রবাসীদের জন্য বিশেষ কোটা বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।
১২. সুপ্রতিষ্ঠিত তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যেন বিদেশি বাজারের বন্ড/এবিএস/সুসাক/ডিপোজিটরি
রিসিপ্টের মতো আকৃষ্ট হয় সে জন্য উদ্যাগ নিতে হবে।
১৩. নিম্নমানের বা দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোকে বাদ দিতে হবে।
১৪. কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ,
মার্চেন্ট
ব্যাংক, স্টক ব্রোকার ও তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির ওয়েবসাইটে
বিদেশি বিনিয়োগ-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য সম্বলিত নির্দিষ্ট জায়গা (কর্নার) থাকতে
হবে। যেখানে অনাবাসী ও বিদেশি
বিনিয়োগকারীরা পরামর্শ ও অভিযোগ দিতে পারবে।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন