দেশে বর্তমান রাজনৈতিক কিংবা অন্য যে কোন ইস্যুতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক কোন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা বয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর নানামূখী ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে বাজার তার স্বাভাবিক গতির ওপর ভর করে অগ্রগতির গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে। গত দুই মাসে আগেও যারা সাইড লাইনে বসে ছিল তারাও পুরোপুরিভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকরা সরকারের তরফ থেকে ইতিবাচক সংকেতের ফলশ্রুতিতে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সবার মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে।
এ অবস্থায় রাজনৈতিক কিংবা অন্য যে কোন ইস্যুতে শেয়ারবাজারে গতিশীলতা নিয়ে কারো মধ্যে কোন ভয় কিংবা শঙ্কা নেই। তবে যারা বাজারে প্রয়োজনীয় সময় বিনিয়োগে আসতে পারেনি তারাই এখন নানা ইস্যুতে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান শেয়ারবাজারের গতিশীলতা কেন্দ্র করে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল আচারণ করতে হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাজার অত্যন্ত নিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছিল। এরপর বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলে। বিনিয়োগকারীরা ছিল অজানা শঙ্কায়। এদিকে বাজার বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা শেয়ারবাজার নিয়ে অনেক আলোচনা, দেশের অর্থনীতিতে কতটুকু গুরুত্ব বহন করছে এবং বিনিয়োগকারীদের সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো সরকারের দায়িত্ববোধকে নাড়া দেয়। এপ্রেক্ষিতে সরকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য স্কীম বাস্তবায়ন, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের মনিটরিং পলিসি, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের বাজেটে বাজারের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা এবং সর্বোপরি ইনভেষ্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’র (আইসিবি) দায়িত্বশীল আচারণে বাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধারা আরো সুসংহত রাখতে সবার অংশগ্রহণকে দীর্ঘ মেয়াদি করে তুলতে হবে। এদিকে দেশের শেয়ারবাজারসহ অন্যান্য খাতগুলোর উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীরও সমর্থন রয়েছে। যা জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সবার নজর কেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ৬ মে রাজধানীতে হেফাজত ইসলামের কর্মসূচিকে ঘিরে যে ধরনের নাশকতার আশঙ্কা ছিল সেটি সরকার কৌশলী নির্ধারনের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছিল। একইসঙ্গে সরকারের তরফ থেকে ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারে পুন:অর্থায়ান, শেয়ারে বিনিয়োগসহ নতুন বাজেটে বাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে ফান্ড সরবরাহের বিষয়টি গুরুত্ব বহন করছে। এসব বিষয়গুলো নিয়ে বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ও কিছু প্রাতিষ্ঠানিকরা দারুন আস্থাশীল হয়ে উঠছে।
গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাজারে সূচক ৪০০০ থেকে ৪৭০০ পয়েন্টের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা লোকসানের মধ্যেও একটু স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে হঠাৎ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অজানা আশঙ্কা দানা বেঁধে ওঠে। মূলত আন্তজার্তিক ট্রাইব্যুনাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিকরা ধীরে ধীরে বাজার থেকে বেরিয়ে সাইড লাইনে চলে যায়। এতে বাজারে দিনে দিনে লেনদেন ও সূচকের একটানা পতন অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় চলতি বছরের মে মাস থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠলে বাজারের চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করে। অপরদিকে সরকারের তরফ থেকে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে পুন:অর্থায়নের ঘোষণা, সরকারের শেয়ারে বিনিয়োগসহ বাজেটে বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে ফান্ড সরবরাহ করার মতো ইতিবাচক অবস্থান রয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে বাজারে রাজনৈতিক কিংবা অন্য যে কোন ইস্যুতে বড় ধরনের নেতিবাচক কোন অস্থিরতা প্রভাব ফেলব না এমনটি মনে করে সাইড লাইনে বসে থাকা বড় বিনিয়োগকারীরা। আস্থাশীল হয়ে উঠছে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিকরাও বাজার যে অবস্থানে রয়েছে এখান থেকে তারাও শেয়ার কেনার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইছে না। ফলে সবার অংশ গ্রহণে বাজার আবারও লেনদেনে গতি ফিরে পাবে এমনটি ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারী জানান, অন্য ব্যবসার পাশাপাশি শেয়ারবাজার দ্বিতীয় ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ যুদ্ধপরাধ ইস্যু এবং হরতালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এতে দুই মাসের বেশি সময় বাজারের বাইরে ছিলাম। এখন অন্য সময়ের চেয়ে পরিস্থিতি বড় ধরনের নেতিবাচক শঙ্কা সম্ভাবনা দেখছিনা। তাই পুনরায় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ বিষয়ে কয়েকটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের উধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ারনিউজ২৪ডটকমকে জানান, গত কয়েক দিন বাজার একটু একটু করে বাড়ছে। তবে বাজারে বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসতে শুরু করছে। এতে অন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থার সঞ্চার ঘটছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের কয়েকটি ইতিবাচক ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রভাব ফেলছে। তবে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে পূর্বের ন্যায় লেনদেন ও সূচকের উন্নতি ঘটবে বলে এ কর্মকর্তারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক নেতা জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখনই উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠবে। বিনিয়োগকারীরা সেরকম কোন ইঙ্গিত পেয়ে হয়ত সক্রিয় হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বাজার যে অবস্থানে রয়েছে সেখানে বিনিয়োগ করার মতো সময় বলে কেউ সুযোগ ছাড়তে চাইছে না।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন