মুনাফার তাড়নায় অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে বেসরকারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড। অতি মুনাফার লোভে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে যেতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদনও করেছে সম্প্রতি। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সাধারণ ব্যাংকিং আর করতে চায় না ব্যাংকটি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদনের বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
সূত্র জানায়, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ। তিনি প্রভাব খাটিয়ে এটি করিয়ে দিতে চাইছেন বলে জানা গেছে। এজন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরে চাপ দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে একমত বিব্রত।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, মূলত অতি মুনাফার তাড়না থেকেই বেশ কিছু ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং শুরু করতে চাইছে। তার মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকও একটি। তাদের একটি আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, তবে আপতত দেশে ইসলামি ব্যাংক রয়েছে সাতটি। অনুমোদন পাওয়া ইউনিয়ন ব্যাংকও ইসলামি ব্যাংক করবে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর নতুন করে এই মুহূর্তে কাউকে ইসলামি ব্যাংকের অনুমোদন নিতে চায় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো সূত্র বলছে, আবেদনে মুনাফার বিষয়টি প্রকাশ না করলেও সাধারণ ব্যাংকিং থেকে যারাই ইসলামি ব্যাংকিং করতে চাইছে মূলত তিনটি সুবিধা থেকে। এক নম্বরই হচ্ছে, অতি মুনাফা। বাংলাদেশে গত দুই-তিন বছরে ব্যাংকিং খাত টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে গেলে। কিন্তু এমন টানাটানির মধ্যে ভালো মুনাফা করেছে ইসলামি ব্যাংকগুলো। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে ফুলে-ফেঁপে উঠছে দেশের সবকটি ইসলামি ব্যাংক। গ্রাহককে স্বল্প মেয়াদে অর্থের যোগান দিলেও সুদ চার্জ করে বছরের জন্য। ফলে ইসলামি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দৌড়ে পারছে না সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তাদের বার্ষিক মুনাফা প্রতি বছরই বাড়ছে। আর সেই ধারণা থেকেই স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ইসলামি ব্যাংকিং শুরু করতে চায়।
দ্বিতীয়ত, ইসলামি ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারল্য সুবিধাসহ সুবিধা ভোগ করে ইসলামি ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে নগদ তারল্য সুবিধায় ৫ শতাংশ ছাড়া পায় ইসলামি ব্যাংকগুলো। সাধারণ ব্যাংকগুলোকে যেখানে আমানতের ১৮ শতাংশ রাখতে হয়। সেখানে ইসলামি ব্যাংকগুলো ১৩ শতাংশ রাখার সুযোগ পাচ্ছেন।
তৃতীয়ত, সবচেয়ে বড় কারণ হলো, মানুষের ইসলামি মনোভাবকে ব্যবহার করে মূলত ব্যবসা করা। সেই প্রেক্ষাপট থেকেই স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এমনটা চাইছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালেও ব্যাংকটির প্রকৃত অর্থে লোকসানে ছিল। ২০১২ সালেও মুনাফা কমে গেছে। এসব কারণে তারা দ্রুত ইসলামি ব্যাংকিংয়ে যেতে চাইছে। তারা মনে করছে, সাধারণ ব্যাংকিংয়ে হয়তো ভালো করতে পারবে না।
জানা গেছে, ইসলামি ব্যাংক শুরু করলেও রাতারাতি এমনটি হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক করতে দেবে না। কারণ তাদের মেয়াদি অনেক আমানত ও ঋণ সুদের হিসাবে থাকবে।
এ ব্যাপারে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন মোবাইল ফোনে জানান, তিনি জার্মানিতে রয়েছেন। দেশে আসার পর কথা বলবেন।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন