প্রত্যেকটা তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে শেয়ারধারনকারী পরিচালক যারা সার্ভিস বাবদ বেতন গ্রহণ করেন তারা থাকেন সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে আর একইপদে নিয়োগপ্রাপ্ত কোম্পানির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তিরা থাকেন কঠোর নিয়মকানুনের মধ্যে বন্দী। যেখানে শেয়ার ধারণকারী পরিচালকরা দায়সাড়া দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও নিয়োগপ্রাপ্তরা নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। এ ধরণের বৈষম্য কোম্পানির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে শেয়ারধারী পরিচালকেরা নামমাত্র সার্ভিস প্রদান করে পূর্ণ সন্মানি নেন। তারা ইচ্ছামতো অফিসে যাওয়া আসা করেন। চাকুরী বাবদ মাস শেষে সন্মানি নিলেও চাকুরিবিধি মানা হয় না। শেয়ারধারী পরিচালক হবার কারণে এ ধরণের পরিচালকদের জবাবদিহিও করতে হয় না। কিন্তু একই পদে যদি কোম্পানির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তি কাজ করে তাহলে তাকে অনেক শোষণের শিকার হতে হয়। তাকে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত হতে হয়, যথাসময়ে কাজ করতে হয় এবং জবাবদিহি করতে হয়।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে শেয়ারধারনকারী বা উদ্যোক্তা পরিচালক এবং কোম্পানির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) দায়িত্ব পালনে দেখা যায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য। শেয়ারধারনকারী বা উদ্যোক্তা পরিচালকেরা দায়িত্ব পালন করেন নিজের মতো করে। আর কোম্পানির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তিদের থাকতে হয় নানামুখী চাপের মধ্যে। আবার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আগে এবং পরে শেয়ারধারী পরিচালকদের সন্মানি নেয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক উল্লস্ফন লক্ষ্য করা যায়। তালিকাভুক্তির আগে তুলনামুলক কম সন্মানি নিলেও তালিকাভুক্তির পর অধিকাংশ পরিচালক কয়েকগুণ বেশি সন্মানি নেন।
এমন কোনো কোম্পানি নেই যেখানে শেয়ারধারনকারী পরিচালককে কাজের ভুলের জন্য পর্ষদ বা কর্তৃপক্ষ বহিস্কার করেছে। কিন্তু শত শত কোম্পানি আছে যেখানে শেয়ারধারনকারী না হওয়ার কারণে একই পদের একই কাজের একই ভুলের জন্য চাকরি হারাতে হয়েছে অনেক পরিচালককে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কোম্পানির এমডি বলেন, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শেয়ারধারনকারী পরিচালক এবং শেয়ারধারণকারী নন এমন পরিচালকদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। শেয়ারধারী পরিচালকরা যদি কাজ সঠিকভাবে নাও করে তবে তার জন্য জবাবদিহিতার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ, কার কাছে তিনি জবাবদিহিতা করবেন? যাদের কাছে করবেন তারাও কোম্পানির মালিকানার অংশীদার। অথব শেয়ারধারণ করার পরও কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডাররা উপেক্ষিত। কিন্তু কোম্পানির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তিরা আবার ওই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে তাদেরকে অনেক ধরনের শাস্তির আওতায় পড়তে হয়।
বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো পরিচালকদের দুর্নীতির অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে বলে জানান ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান। যেখানে কোম্পানি দিন দিন শুকিয়ে যায় এবং পরিচালকেরা মোটা হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। যার কারণে সম্প্রতি সব জায়গায় আলোচনাকালে কোম্পানির দুর্নীতিরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে কঠোর হওয়ার আহ্বান করেন রকিবুর রহমান। এছাড়া অবিলম্বে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বাস্তবায়নেরও আহবান জানান ডিএসইর এই সাবেক প্রেসিডেন্ট।
শেয়ারহোল্ডারদেরকে আপন ভাবতে না পারার কারণে পরিচালকদের মধ্যে এ প্রবণতা বিদ্যমান বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কোম্পানি যখন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় তখন পরিচালকদের মানসিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়। তারা তখন বেশি সুবিধা নেয়ার ফন্দি আটেন। তবে কোম্পানিগুলোতে করপোরেট গর্ভন্যান্স গাইডলাইন পরিপালন করা হলে এ প্রবনতা কমবে। এছাড়া ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বাস্তবায়ন হলে কোম্পানিগুলোতে অনিয়ম কমে যাবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন