আইসিবি’র বিক্রির চাপে বাজার কোণঠাসা!
রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ার বিক্রির চাপে গত কয়েকদিন যাবত বাজার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতনের বাজারে আইসিবি যেখানে ক্রেতার ভ’মিকায় থাকার কথা, সেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো বিক্রেতার ভ’মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এমনকি তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির থ্রিজি প্রাপ্তির মতো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আসার পরও আইসিবি’র বিক্রির চাপে শেয়ারটির দর দাঁড়াতে পারেনি।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে বাজার এমনিতেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তারপর যদি আইসিবি’র মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাজার ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন। বাজারের এ নাজুক পরিস্থিতিতে আইসিবি-কে বিক্রেতার ভ’মিকার পরিবর্তে ক্রেতার ভ’মিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা। এদিকে, বিনিয়োগকারীরাও নাজুক বাজারে আইসিবি’র শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার দাবী জানিয়েছেন।
তথ্য মতে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা মোতাবেক আইসিবি প্রথম মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে আইসিবি অষ্টম মিউচ্যুয়াল ফান্ড পর্যন্ত ৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) পরিচালনায় প্রথম বিএসআরএস মিউচ্যুয়াল ফান্ড আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবসায়ন হবে। এ কারণে ফান্ডগুলির পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারগুলি আইসিবি ও বিডিবিএল বিক্রি শুরু করেছে। ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের বিক্রির চাপে টার্নওভারের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারগুলো পর্যন্ত চাপের মুখে পড়েছে। ফলে কোম্পানিগুলোর টার্নওভার বাড়লেও বিক্রির চাপে শেয়ারগুলোর দর নি�œগামী হয়ে পড়ে। গত কয়েকদিন যাবত আইসিবি ও বিডিবিএল-এর পরিচালনাধীণ ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওর শেয়ারের বিক্রির চাপ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত মাসের ২৫ তারিখ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ছিল ৪ হাজার ১৬৩ পয়েন্ট। বর্তমানে যা ৪ হাজার ৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এ সময় ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৩ দিন সূচক বেড়েছে। তবে ১০ দিনের ব্যবধানে সার্বিক সূচক কমেছে ৮৬ পয়েন্ট। মূলত: ফান্ডগুলোর শেয়ার বিক্রির চাপে বাজার উঠে দাঁড়াতে পারছে না। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, বাজার পতনের সময়ে আইসিবি-কে বড় ধরণের ক্রেতার ভ’মিকায় দেখা যায় না। বরং আইসিবি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতোই আচরণ করে থাকে। তারা বলছেন, আইসিবি যদি কার্যকরভাবে ক্রেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তাহলে বাজার এভাবে পতনের ধারায় থাকার কথা নয়। কারণ এখন অর্থনীতির সবগুলো সূচকই ইতিবাচক রয়েছে যা পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত পরিপূরক।
জানা যায়, ২০০৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ায় যেসব মেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে বিএসইসি সেগুলোকে ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ জারি করে। কিন্তু ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারে ধস শুরু হলে ফান্ডগুলোর মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসায় ফান্ডগুলোর মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ায় বিএসইসি। আর চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফান্ডগুলো গুটিয়ে নেয়ার সময় বেঁধে দেয়া হয় এবং ফান্ডগুলোর মেয়াদ পরবর্তীতে আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সে হিসেবে আইসিবিকে এসব ফান্ড গুটিয়ে নিতে হবে আর ৪ মাসেরও কম সময়ে। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে আইসিবির ওই ৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আইসিবি ৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে অবসায়ন না করে বে-মেয়াদী ফান্ডে রূপান্তরিত করতে পারতো। বর্তমান বাজারের নাজুক পরিস্থিতিতে আইসিবি’র মতো অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ধরণের অপরিপক্ক সিদ্ধান্তু বাঞ্চনীয় নয়। আইসিবি বরং ফান্ডগুলোকে বে-মেয়াদী করে বোনাস ও রাইট ইউনিট ইস্যুও মাধ্যমে ফান্ডগুলোর আকার বৃদ্ধি করতে পারতো। তাহলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাবের পরিবর্তে ইতিবাচক প্রভাবই পড়তো। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফান্ডগুলোকে গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত মোটেও সমীচীন হয়নি বলে তাঁরা মনে করেন।
ডিএসই’র সর্বশেষ তথ্যমতে আইসিবি’র পরিচালনাধীন ৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং ফাস্ট বিএসআরএস মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পরিশোধিত মূলধন ২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখের হিসাব অনুযায়ী আইসিবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ১০ টাকা ফেস ভ্যালুর বিপরীতে প্রথম আইসিবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটপ্রতি নেট এসেট ভ্যালু (এনএভি) ক্রয় মূল্য অনুসারে ১২৫.৫৩ টাকা এবং বাজার মূল্য অনুসারে ১১২৯.২০ টাকা। দ্বিতীয় আইসিবির ইউনিট প্রতি নেট এসেট ভ্যালু (এনএভি) ক্রয় মূল্য অনুসারে ৮৩.৯৭ টাকা এবং বাজার মূল্য অনুসারে ২৪৮.২০ টাকা, তৃতীয়টির ক্রয় মূল্য অনুসারে এনএভি ৫৮.৬৭ টাকা আর বাজার মূল্য অনুসারে ২৪৪.৪৬ টাকা, চতুর্থটির ক্রয় মূল্য অনুসারে এনএভি ৬৪.৩৪ টাকা আর বাজার মূল্য অনুসারে ২২৬.৮০ টাকা, পঞ্চমটির ক্রয় মূল্য অনুসারে এনএভি ৩৯.১৪ টাকা আর বাজার মূল্য অনুসারে ১৭৬.৫৮ টাকা, ষষ্ঠটির ক্রম মূল্য অনুসারে এনএভি ২৪.৮৩ টাকা আর বাজার মূল্য অনুসারে ৫১.৬৪ টাকা, সপ্তমটির ক্রম মূল্য অনুসারে এনএভি ২৮.২২ আর বাজার মূল্য অনুসারে ৮৯.৬৪ টাকা এবং অষ্টম আইসিবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি নেট এসেট ভ্যালু (এনএভি) ক্রয় মূল্য অনুসারে ২৫.১৫ টাকা আর বাজার মূল্য অনুসারে ৫৮.৩১ টাকা। - See more at: http://www.sharenews24.com/index.php?page=details&nc=01&news_id=28961#sthash.ty9YfRJA.dpuf
Tags:
ICB,
Share Market News
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন