শেয়ার
কেনাবেচার ক্ষেত্রে মার্জিণ ঋণ গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন প্রথম শর্ত। পাওয়া যাবে তাই ইচ্ছেমত ঋণ নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ, ঋণগ্রস্তরা
যখন লোকসানে পড়েন তখন তাদের দ্বিগুণ ক্ষতির শিকার হতে হয়। তাই ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সুচিন্তিত বিবেচনা করতে হবে
বলে জানান বাজার বিশ্লেষকরা।
ভয়াবহ ধসের পর টানা পতনের কবলে ক্ষতির মুখে পড়েননি এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা
নেই বললেই চলে। কিন্তু এর
মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন যারা অতি মাত্রায় ঋণ নিয়েছিলেন। তবে যারা স্বাবলম্বী হয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন ধসের পর
তারা তুলনামুলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। আর
অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণকারীরা বাজার ধসের পর সুদ-আসল পরিশোধে নাকাল হয়ে পড়েন।
পুঁজিবাজারে টানা পতনের কবলে পড়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এমন তিন ধরনের
বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রকৃত চিত্র। তিন ধরনের বিনিয়োগকারীর মধ্যে প্রথমত হচ্ছে যারা
নিজের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, দ্বিতীয় যারা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন
তৃতীয়ত: যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না কিন্তু বিনিয়োগ করেছেন।
ঋণ না নিয়ে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারী জাকির আহমেদ জানান,
৫
বছর ধরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আসছি। যখন
পতন শুরু হয় তখন বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১১ লাখ টাকা। যা এখন ৪ লাখ ৪৩ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এতে ধৈর্য্য হারাইনি। কারণ, জানি
এক সময় বাজার স্বাভাবিক হবেই।
ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারী আমির হোসেন জানান, নিজস্ব
বিনিয়োগ ৯ লাখের এর সঙ্গে ঋণ নেই আরো ৯ লাখ। এতে
মোট বিনিয়োগের পরিমান দাঁড়ায় ১৮ লাখ। ধসের
পর ইক্যুইটি দাঁড়ায় ৬ লাখ। আর
সুদ বাদ দিলে এখন আর বিনিয়োগের কিছুই নাই। উল্টো
ব্রোকারেজ হাউজ এখন আমার কাছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা পায়। এ সময় জাকির হোসেন নিজের ভুলের কথা স্বীকার করেন
বলেন, সবচেয়ে বেশি ভুল করেছি ঋণ নিয়ে। যা আজ বিপদের সবচেয়ে বড় কারণ।
আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল বিনিয়োগকারী মিলন উর রশীদ জানান,
আমার
ছেলে মেয়ে তিনজনই লেখা পড়া করে। বেশ
ভালোভাবেই সংসার চলছিল। কিন্তু এক
বন্ধুর কাছে শেয়ারবাজারের লাভ সর্ম্পকে জানতে পারি। তারপর শেয়ারবাজারে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। এক সময় কিছুটা মুনাফা করতে সক্ষম হই। এরপর আরো লাভের আশায় স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে আরো ২
লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। আর নিজের থাকা
সব মিলিয়ে আরো দেড় লাখ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করি। সব মিলিয়ে এক সময় বিনিয়োগের পরিমান দাঁড়ায় সাড়ে
পাঁচ লাখ টাকা। যা এক সময়
মুনাফাসহ হয় ৮ লাখ টাকা। কিন্তু আরো
লাভের আশায় সব শেয়ার রেখে দেই। কিন্তু
সেটা কাল হয়ে দাঁড়ায়। এখন
পুঁজিবাজারের মহাধসের কারণে ছেলে-মেয়ের স্কুলের বেতন দিতে পারছি না। খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। এক ধরনের হতাশা ঘিরে ধরেছে। কিন্তু এই দুঃখের কথা কারো সঙ্গে শেয়ারও করতে পারি
না।
এ বিষয়ে ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন,
পুঁজিবাজার
একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাজার। কেউ লাভ করবে
কেউ হারাবে। সবার পক্ষে লাভ
করা সম্ভব না। তাই যারা
আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয় এবং ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে চান তাদেরকে আমি সাবধান হতে বলব। কারণ, পুঁজিবাজারের
পতনের কবলে সব সময় এ ধরণের বিনিয়োগকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন