দেশের
পুঁজিবাজার দীর্ঘ দিন ধরে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বিদ্যমান জটিলতা কাটিয়ে বাজার স্বাভাবিক
পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পদেক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বার্থান্বেসী সিন্ডিকেট চক্রের কারণে পুরো
সফলতার মুখ দেখেনি নীতি নির্ধারকরা। তবে
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দাবি
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংস্থাটি সোচ্চার। কিন্তু
বাস্তবে এ বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত হয়নি। তাই
ভবিষ্যতে সিন্ডিকেটমুক্ত বাজার উপহার দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো সোচ্চার হতে হবে
বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
দীর্ঘ অস্থিরতা কাটিয়ে দেশের পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায়
ফিরলেও এখনো আস্থা সংকট পুরোপুরি কাটেনি। সিন্ডিকেট
চক্রের অনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে নানা সংশয়ে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ইতিপূর্বে বাজার কারসাজিকারীরা অনৈতিক কর্মকান্ড
করেও শাস্তি না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বাজারের উপর এখনো পুরোপুরি আস্থা পাচ্ছেন না। এছাড়া বর্তমান বাজারে সিন্ডিকেট চক্রের অবাধ
পদচারণা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আরো ভাবিয়ে তুলেছে। যে কারণে অনেকে এখনো নিজের পকেটকে নিরাপদ মনে করছেন
বলে জানা গেছে।
যখন ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে যখন পতন শুরু হয় তখনই সিন্ডিকেট দলের নাম চলে
আসে। কারা বাজারে ধস নামিয়েছে তা খতিয়ে
দেখতে ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যে তদন্তে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম উঠে
আসে। যাদেরকে বিনিয়োগকারীরা সিন্ডিকেটের
লোক বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু
ইব্রাহিম খালেদের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ধরনের আইনী ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় এখনো কাটেনি।
ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান
জানান, বাজারে যদি কোনো ধরনের সিন্ডিকেট চক্র থাকে তাহলে
তাদেরকে অবশ্যই ধরতে হবে। সিন্ডিকেট
চক্রকে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ধরে আইনের আওতায় আনা দরকার বলে জানান তিনি। এছাড়া এদিকে ডিএসই শতভাগ সক্রিয় বলে তিনি উল্লেখ
করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে
রকিবুর রহমান অর্থ মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে বাজারকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত
করবেন বলে জানান। যেখানে কোনো দল
একত্রিত হয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকাতে পারবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
সিন্ডিকেট চক্র সব সময়ই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন শেয়ারের দর গুজব
ছড়িয়ে অতিমূল্যায়িত করে। পরে সাধারণ
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তা বিক্রয় করে দিয়ে বাজার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। শেষ পর্যায়ে লোকসানের কবলে পড়েন সাধারণ
বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে ভয়াবহ ধসের পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছে তারা এখনো অবাধে ঘোরাফেরা করছে। অথচ তদন্ত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনানুগ
ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার- এমনটাই দাবি বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য
পরিষদের। তাদের দাবি,
সিন্ডিকেট
চক্রগুলোকে আইনের আওতায় আনতে না পারার কারণে বাজারের এই করুণ অবস্থা। এছাড়া এখন বিনিয়োগকারীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে
কি লোক দেখানোর জন্য ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত করা
হয়েছিল?
বিনিয়োগকারী রিনা আহমেদ বলেন, আজ
আমরা কিসের উপর ভর করে বিনিয়োগ করবো? যেখানে
এতো বড় একটা কারসাজির পরও সিন্ডিকেট চক্রকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি সরকার,
সেখানে
কিভাবে আবার বিনিয়োগ করে টাকা ফেরত পাওয়ার ভরসা রাখি?
আর
এখনো বাজার সিন্ডিকেট দল নিয়ন্ত্রণ করছে বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম নিয়েও
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন