শেয়ারবাজার সাময়িক বিনিয়োগের জায়গা কিংবা অল্প সময়ে
মুনাফা করার স্থান এমন ধারণা পোষণকারী বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন। অপরদিকে, অলস অর্থ কিংবা
এখুনি প্রয়োজন নয় এমন অর্থ দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করে যারা মুনাফার আশা করেন তারা
ক্ষতির মুখে পড়েন না। যারা দৈনিক লেনদেন, গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে ফায়দা হাসিলের সুযোগ নেন
তারা বাজারের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করেন বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারকরা। আর অংশীদারিত্বের মানসিকতা নিয়ে বিনিয়োগ করা শেয়ারবাজারের মূলনীতি
হওয়া উচিত বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
তাদের মতে, যে কোনো দেশের শেয়ারবাজার ষ্পর্শকাতর স্থান। এখানে সংকটকালীন সময়ে যারা টিকে থাকতে পারেন তাদেরই বেশি লাভবান
হওয়ার সম্ভবনা থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা
করে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ এবং কোম্পানি থেকে বার্ষিক লভ্যাংশ অর্জনকারীরা ঝুঁকির
মুখে পড়েন না।
দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক
অস্থিরতা এবং শেয়ারবাজারে তার প্রভাব সম্পর্কে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা
নানাভাবে শেয়ারবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সহিংস পরিস্থিতিতে জনসাধারণের দৈনন্দিন কর্মকান্ড ব্যাহত হয়। এতে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা শেয়ারবাজারকে এক সময় ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে যারা দৈনন্দিন লেনদেনের মাধ্যমে মুনাফা করেন তাদের
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বরাবরই কোনো না কোনো শ্রেনী
বাজার প্রভাবিত করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পকেট কাটার ফন্দি আটে। আর সব সময়ই কোনো না কোনো বিনিয়োগকারী কোনো না কোনো
ফাঁদে পা দেন। ফলে স্বাভাবিকভাবে তারা
ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে যারা সত্যিকার অর্থে
বিনিয়োগের মানসিকতা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসেন তাদের উপর বাজার অস্থিরতার তেমন কোনো
প্রভাব পড়ে না।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)
এক পরিচালক জানান, শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেশে যদি রাজনৈতিক বা অন্য যে কোনো কারণে অস্থিরতা দেখা
দেয় তবে শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি বিশেষের উচিত
প্রয়োজন অনুযায়ী ইতিবাচক সহায়তা প্রদান করা। এখানে বিনিয়োগকারীদেরও অনেক ভূমিকা রয়েছে। বিরূপ পরিস্থিতিতে বৃহত্তর স্বার্থে শেয়ারবাজারকে গুরুত্ব দেয়া হলে
বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা অটুট থাকে। ফলে বাজারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা কমে যায়।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে ওই
পরিচালক আরো বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে
বাজারের গতি পরিধির উপর নজর রেখে বুঝে শুনে বিনিয়োগ ধরে রাখা উচিত। তবে যারা স্বল্প সময়ে বিনিয়োগ ও মুনাফা তুলে নিয়ে বাজার
থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মনোভাব পোষণ করেন তারাই বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অর্থনীতি বিভাগের এক অধ্যাপক ও বাজার বিশ্লেষক জানান, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকট থাকতে পারে। এর প্রভাব শুধু শেয়ারবাজারে নয়, অন্যান্য সেক্টরেও
পড়তে পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে যার যার অবস্থান থেকে সঠিক
কাজটি করলে লোকসানের ঝুঁকি অনেকাংশ কমানো সম্ভব। তিনি আরো জানান, শেয়ারবাজার দীর্ঘ
সময় পর একটি স্বাভাবিক অবস্থানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ সময় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে প্রয়োজন অনুযায়ী সাপোর্ট দিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আরো পরিপক্ব হতে হবে। তাহলে বাজার স্বাভাবিক গতি ফিরে পারে।
এ বিষয়ে বিএমবিএ’র এক নেতা বলেন, শেয়ারবাজারের
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেউ যাতে অনৈতিকভাবে কোনো সুবিধা নিতে না পারে সেদিকে
সংশ্লিষ্টদের নজর রাখা উচিত। দীর্ঘদিন সময় ধরে নানা কারণে বাজার এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তাই বাজারের সার্বিক দিকগুলো বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট
সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের বিকল্প নাই।
বিএমবিএ’র ওই নেতা আরো বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে
পারিপাশ্বিক সব কিছু বিবেচনা করে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ এবং কোম্পানিগুলো থেকে
বার্ষিক লভ্যাংশ অর্জনকারীদের একটা সময় বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন