উত্থান
পতনে অস্বাভাবিকতার অবসান এবং দৈনিক লেনদেনে গতি ফিরে এসেছে দেশের শেয়ারবাজারে। উত্থান
পতনের মধ্যে উত্থানের মাত্রা বেশি হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। স্বাভাবিক
নিয়মে কারেকশন হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের দুঃশ্চিন্তাও অনেকটা কেটেছে। ফলে
দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের শেয়ারবাজারের ক্রান্তিকাল উত্তরণের পথে রয়েছে
বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, ২০১০
সালে বাজারে যেভাবে কম সময়ের মধ্যে উত্থান ঘটেছিল পতনের বেলায় তা দীর্ঘায়িত হয়েছে। তবে
বর্তমান বাজারে লেনদেনের গতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসার পিছনে সরকারের
ইতিবাচক মনোভাব দৃশ্যমান। তাই দেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচল করে তুলতে সরকারের পাশাপাশি
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজারের স্বার্থে পেশাদারি
মনোভাব নিয়ে বিনিয়োগের ভীত মজবুত করতে হবে।
কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট
ব্যাংক এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, যে
কোনো দেশের শেয়ারবাজার যখন ক্রান্তিকালের মধ্যে থাকে তখন সেখান থেকে বের করে আনতে
মূলত: সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে গুরু দায়িত্ব পালন করতে
হয়। এছাড়া
বাজার সংশ্লিষ্ট রেগুলেটর ও স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়ও খুব জরুরি। কিন্তু
২০১০ সালের শেষ দিকে বাজারে যেভাবে ধস নেমেছিল তা অবর্ননীয়। সব শ্রেনীর বিনিয়োগকারীর
লোকসানের পাল্লা ক্রমেই ভারী হয়। এ অবস্থা থেকে বাজার বের করে আনতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের একাধিক
চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদ
মওকুফ বাস্তবায়নে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব সবার মধ্যে নতুন করে উৎসাহ যুগিয়েছে। এরই
ধারাবাহিকতায় বাজারে সব শ্রেনীর বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। ফলে
ক্রমেই বাড়ছে লেনদেন ও সুচক। যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, শেয়ারবাজারের
সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই আস্তে আস্তে বাজারে ফিরে আসায় নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি
হচ্ছে। এ
অবস্থা ধরে রাখতে পারলে কাঙ্খিত পরিবেশ ফিরে আসবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো
চক্র বাজারে অনিয়ম করে যাতে পুনরায় ফায়দা নিতে না পারে সেদিকে সরকারের কঠোর
নজরদারির পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি বলে মনে
করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত
বাজার একটি নির্দিষ্ট আবর্তে ঘোরাফেরা করছিল। বছরজুড়ে ঢাকা স্টক
এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করে। যা
চলতি বছর মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। এ সময় দৈনিক লেনদেন ৫শ’ কোটি
টাকার ঘরে আবর্তিত হয়। এরপর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীদের
মধ্যে অজানা শঙ্কা দানা বাঁধতে থাকে। বড় পুঁজির ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষকরে
ভূমিকায় অবর্তীন হয়। এতে বাজারে লেনদেন তীব্রভাবে কমতে থাকে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত
১৪ ফেব্রুয়ারী ডিএসই’র সাধারণ মূল্য সূচক ছিল ৪৩৯৬ পয়েন্ট
এবং লেনদেন হয়েছিল ৫৫৩ কোটি টাকা। যা চলতি বছরের জানুয়ারীর শুরু থেকে ৩০০ কোটি টাকা
থেকে বাড়তে থাকে। এরপরে
আবার বাজারে নেতিবাচক প্রবনতা নেমে আসে। একটানা প্রায় দুই মাস (ফেব্রুয়ারী থেকে ১ এপ্রিল) ডিএসই’র সূচক সাড়ে ৪ হাজার থেকে নেমে আসে ৩৬১০ পয়েন্টে এবং লেনদেন ১৩৮ কোটি
টাকায়। এরপর
একটু একটু করে সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকলেও তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। এরপর ২ এপ্রিল থেকে ১৮ জুন
পর্যন্ত ডিএসইতে ৫৪ কার্যদিবসে সূচক বেড়েছে ৮৬৭ পয়েন্ট। ৮৬৭ পয়েন্ট বাড়লেও
এরমধ্যে একাধিকবার সূচক সংশোধন হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে লেনদেন ১০৭ কোটি থেকে ১ হাজার ৭২ কোটি টাকায়
উঠেছে। পাশাপাশি
ডিএসই’র বাজার মূলধন ১ এপ্রিল নেমে এসেছিল ২ লাখ ১৬
হাজার কোটি টাকায়। বর্তমানে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮শ’ ৫২
কোটি টাকায়। অর্থাৎ
এ সময়ের মধ্যে বেড়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
বাজার পরিস্থিতিতে এমন ইতিবাচক
পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। অস্বাভাবিক
উঠানামা কমে যাওয়ায় পুরোনো শঙ্কা কাটতে শুরু করেছে। এছাড়া দেশের প্রধান
শেয়ারবাজার ডিএসইতে নতুন নেতৃত্ব বিনিয়োগকারীদের মানসিকায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন
এনেছে। সব
মিলিয়ে ক্রান্তিকাল উত্তরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন