বিজিএমইএর এই পরিচালক রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে পৌঁছাবার প্রক্রিয়া চলছে। তবে মালিকদের কিছু শর্তও থাকবে। ২০ নভেম্বর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।”
গত ৪ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভায় ভোটাভুটিতে ওই ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব পাস হওয়ার পর গার্মেন্ট মালিকদের প্রতিনিধিরা সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান।
পরে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, শ্রমিকদের ওই অর্থ দেয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের পোশাক খাতের নেই।
পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে গঠিত এই বোর্ডে আরশাদ জামাল ছাড়াও মালিকপক্ষের স্থায়ী সদস্য হিসাবে রয়েছেন কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ। অন্যদিকে শ্রমিক প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন সিরাজুল ইসলাম ও ফজলুল হক।
সাবেক জেলা জজ এ কে রায়ের নেতৃত্বে এই বোর্ডে নিরপেক্ষ সদস্য হিসাবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. কামাল উদ্দীন।
আরশাদ জামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে কারখানা মালিকরা নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য কয়েক মাস সময় পেয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগপত্র জমা দেব।”
তবে সরকার ‘চাপ দিলে’ অবিলম্বে নতুন মজুরি কাঠামোর বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে বলেও তিনি ইংগিত দেন।
কারখানা মালিকদের এই নেতা জানান, ন্যূনতম মজুরির ওই কাঠামো মেনে নেয়ার বিষয়টি ছাড়াও শ্রমিকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) বিষয়টি নিয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে।
তাছাড়া শ্রমিকদের ছুটির হিসাবও নতুন একটি কাঠামোয় আনার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান বিজিএমইএর এই পরিচালক।
তিনি বলেন, “কিছু নির্দিষ্ট দিনে কারখানা চালু রাখা নিয়ে অনেক সময় মালিক-শ্রমিক বিরোধ দেখা দেয়। এ বিতর্কেরও অবসান ঘটানো হবে।”
প্রস্তাবিত ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির মধ্যে মূল বেতন ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকা।
এছাড়া ১ হাজার ২৮০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ৩২০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ২০০ টাকা যাতায়াত ভাতা এবং খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৩০০ টাকা ধরা হয়েছে।
মালিকপক্ষের প্রস্তাব মেনে নেয়ার খবরে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা যদি মেনে নেন তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের স্বাগত জানাব। শ্রমিকরাও এ শিল্পের স্বার্থে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে।”
বোর্ডের সভায় শ্রমিক প্রতিনিধিরা ৫ হাজার ৩০০ টাকার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও এখনো কিছু সংগঠন আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মালিকপক্ষ প্রস্তাব মেনে নিলে একটি দুটি সংগঠন যারা এখনো আন্দোলনে আছে- তারাও তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৭ জুলাই পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সাধারণত ৫ বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করার নিয়ম থাকলেও বাংলাদেশে কখনোই তা ঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের এই শিল্পে ৩৬ লাখের বেশি শ্রমিক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও আগের মজুরি কাঠামোই সব কারখানায় ঠিকমতো অনুসরণ করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন এবং গত ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বল্প মজুরির বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে আসে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পোশাক বর্জনেরও হুমকি দেয়া হয়।
এই প্রেক্ষাপটে গত জুনে পোশাক খাতের বেতন পুননির্ধারণের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড ঘোষণা করেন শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। ২৪ জুন এ বিষয়ে গেজেট জারি হয়।