ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের বেড়াজালেই আটক পুঁজিবাজার
বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩
দীর্ঘ অস্থিরতার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে না হতেই ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এতে করে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট অসৎ ব্যক্তিরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইনসাইডার টেডিংয়ের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের শংকা কাটছে না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিস্টরা। অপরদিকে, ইনসাইডার ট্রেডিং ঠেকানোর ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আমাদের বাজার। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালকদের বিষয়ে সামান্য বাধ্যবাকতা থাকলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো তদারকি নেই।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইনসাইডার ট্রেডিং বা কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগাম ফাঁসের মাধ্যমে স্বার্থ হাসিলের পায়তারা আবারো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেক কোম্পানি তাদের প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর সে প্রতিবেদন অতীতের তুলনায় ভালো না খারাপ হবে তা আনুষ্ঠানিক প্রকাশের আগেই বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব সংবাদের উপর ভিত্তি করে অনেকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন। কিন্তু কোম্পানির প্রান্তিক শেষ না হতেই প্রতিবেদন ভালো নাকি খারাপ হবে তা বিনিয়োগকারীদের জানার কথা নয়। যদি না কোম্পানিতে কর্মরত কারো মাধ্যমে সংবাদ ফাঁস হয়। কেন আগাম তথ্যের উপর নির্ভর করেন বিনিয়োগকারীরা? এমন প্রশ্নের জবাবে বেশ কয়েকজন সাধারণ বিনিয়োগকারী বলেন, অধিকাংশ সময় এ ধরণের আগাম তথ্য সত্য হয়। কিন্তু কোনো কোনো সময় সত্য হয় না। ফলে এ ধরণের আগাম তথ্য বিশ্বাস করে অধিকাংশ সময় লাভবান হলেও অনেক সময় ঠকতেও হয়। তাই অনেকে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ে (ফাঁস হওয়া আগাম তথ্য) বিশ্বাস করেন বলে তারা জানান। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা দৈনিক লেনদেন করেন এবং শেয়ারব্যবসা তাদের একমাত্র জীবিকা। যে কারণে তারা প্রতিদিনই মুনাফার আশা করেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী সচেতন নন। এছাড়া শেয়ারব্যবসা সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। তারা অল্প সময়ে অধিক মুনাফা প্রত্যাশী। যে কারণে তাদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ পায় কারসাজি চক্র। ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, যদি কোনো কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগে থেকে ফাঁস হয়ে যায় এবং তা যদি পরবর্তীতে সত্য হয় তবে বুঝতে বাকি থাকে না যে এতে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কেউ না কেউ জড়িত। যারা কোম্পানির ভেতরের খবর রাখেন। বিশেষ করে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের দ্বারাই এ ধরণের তথ্য ফাঁস হয়। কারণ, পরিচালকদের অনেকে নামে বেনামে শেয়ারব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কোম্পানির ভেতরের খবর জানেন বলেই তারা সুযোগ বুঝে শেয়ারের দর বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে তাদের সহায়ক কোনো পক্ষকে আগাম তথ্য দিয়ে দেন। আর ইনসাইডার ট্রেডিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও প্রমাণের অভাবে এ প্রবণতা দূর করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে দেশের পুঁজিবাজার থেকে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের সংস্কৃতি বন্ধ করতে পারেন। তবে এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সদিচ্ছা এবং বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদেরও আচরণ পরিবর্তন জরুরি। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগে ও পরে মোট ৪ মাস শেয়ার লেনদেনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মূলত: ইনসাইডার ট্রেডিং নিয়ন্ত্রণ করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি প্রান্তিক প্রতিবেদনের ইপিএস কোম্পানির শেয়ার দর বাড়া-কমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। সেদিকে লক্ষ রাখা হয়নি আইনে।কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অন্য কাউকে আগাম তথ্য দিলে সে বিষয়ে কোনো তদারকির প্রক্রিয়া নেই। প্রায় সব কোম্পানির ক্ষেত্রে ইপিএস ও ডিভিডেন্ডের আগাম তথ্য বাজারে চলে আসে। নির্দিষ্ট পরিমান না জানা গেলেও আগের বছরের তুলনায় ইপিএস ও ডিভিডেন্ডের পরিমান ভালো হবে কিনা তা আগেই বাজারে প্রকাশ হয়ে যায়। কোম্পানি কর্তৃপক্ষের যোগ সাজোস ছাড়া আগাম তথ্য ফাঁস হওয়া সম্ভব নয়। তাই এ তথ্য কোম্পানি ফাঁস করে থাকে তবে এ ক্ষেত্রে কখানোই কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।
Tags:
Share Market News
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন