ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত এমএসএ প্লাস সফটওয়্যারের ত্রুটিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এতে লাখো বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা করা হয়।
গত বছরের ১০ জুন এমএসএ প্লাস সফটওয়্যার চালুর পর থেকে ডিএসইতে লেনদেন নিয়ে বিভিন্ন সময় সমস্য তৈরি হয়। তাতে নতুন কম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরুর দিনে সামগ্রিক লেনদেন শুরু করতে আধঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হয়। এ ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে গত ২৪ মার্চ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (এসআরএমআইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম। কমিটি সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে এমএসএ প্লাস সফটওয়্যারের নানা ত্রুটি ও দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে। এই সফটওয়্যারের সর্বাধিক শেয়ার ধারণ ক্ষমতার অভাব, নতুন কম্পানির লেনদেনের শুরুর দিন ক্রয়-বিক্রয় আদেশ সম্পন্ন না হওয়া, ব্রোকারেজ হাউসে লেনদেনে সমস্যা, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ রিপ্রেজেনটেটিভের কারিগরী ও দক্ষতার অভাব এবং ডিএসইর সাবধানতার অভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সফটওয়্যারের সমস্যার জন্য ডিএসই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ স্থগিত রেখেছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এমএসএ প্লাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বড় লেনদেনের ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে সমর্থন দিতে না পারা। এ সফটওয়্যারটির আরো একটি সীমাবদ্ধতা হলো সংকেত না দেওয়া। বিশেষ করে নতুন কম্পানি বাজারে আসার দিনে বড় আকারের লেনদেনের ক্ষেত্রে সংকেত দিতে পারে না। এ সমস্যা সঠিকভাবে এবং জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করতে না পারলে বড় লেনদেনের ক্ষেত্রে পুরো মার্কেটে বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রতিবেদনে যেসব সমস্যা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়-
সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার অভাব : ডিএসইর সদস্যভুক্ত ২৫০টি ব্রোকারেজ হাউসের পাঁচ হাজার ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশন থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ শেয়ার লেনদেন করার ক্ষমতা রয়েছে সফটওয়্যারটির। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে তা কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই করা হয়নি। যা একেবারেই বাস্তব সম্মত হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয় পরীক্ষামূলকভাবে যে মক-ট্রেড করা হয়েছিল, তাতে ২০৯টি ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে দুই হাজার ৬৭টি ডাব্লিউএস লগইন করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ ৩৫ হাজার ৩৮৬টি ক্রয়-বিক্রয়ের অর্ডার বা আদেশের মধ্যে এক লাখ ১১ হাজার ২৩৯টি শেয়ার লেনদেন সম্পন্ন হয়। ডিএসইর বিবেচনায় সর্বশেষ পরীক্ষামূলক প্রস্তুতিতে বা মক ট্রেডিংয়ের সময়ে এমএসএ প্লাস সফটওয়্যারের কাজ সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কম হয়েছে।
নতুন কম্পানির লেনদেনের শুরুর দিনে সমস্যা : ওই সময়ে ডিএসইর মোট শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কমে যায়। ফলে বাজারে গত ৫ ও ৯ ডিসেম্বর যে দুটি নতুন কম্পানির লেনদেন শুরু হয়, তাতে এমএসএ প্লাস কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ব্রোকারেজ হাউসের সমস্যা : গত বছরের ১০ জুন এমএসএ প্লাস চালু করার পর ব্রোকারেজ হাউসগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। যা ডিএসই স্বীকার করেছে। এ সমস্যার মধ্যে রয়েছে- 'অপারেশন এরোর' ও 'টার্মস অব পারফরমেন্স'।
ক্যামব্রিজ রিপ্রেজেনটেটিভের কারিগরী ও দক্ষতাগত সমস্যা : নতুন এ সফটওয়্যারটির নকশা, কোডিং, ফাইন টিউনিংসহ বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি যাচাই-বাছাইয়ের দরকার ছিল। কিন্তু অসংখ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি সমাধান না করেও চালু করে ডিএসই।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন