দেশের শেয়ারবাজারে ঘটে যাওয়া ২০১০-১১ সালের ধসকে জাতীয় ট্রাজেডি হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারীর জন্য নীতি নির্ধারক না কারসাজিকারীরা দায়ী’ শীর্ষক সেমিনারে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
সেমিনারে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বজলুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের ধসের ঘটনা হচ্ছে জাতীয় ট্রাজেডি। এ ঘটনায় নীতি নির্ধারকেরা দায়ী। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় দায়িত্বশীল এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ভুল করেছেন, কিন্তু অন্যায় করেননি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ৫০ থেকে ১০০ জন শেয়ার ব্যবসায়ী লোক মুনাফা করেছেন। কিন্তু ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন লাখ লাখ সাধারণ মানুষ, সঙ্গে সরকারও।
তার মতে, স্টক এক্সচেঞ্জ আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা যখন ঘনিষ্ট যোগাযোগ রেখে কাজ করে তখন এ ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। আমাদের শেয়ারবাজারেও তাই ঘটেছে। এখনও যদি সেটা চলতে থাকে, তবে আবারও একই ঘটনা ঘটবে।
অধ্যাপক বজলুর রহমান বলেন, যখন সবাই ব্যর্থ হয় তখন আসল সত্য হারিয়ে যায়। তবে এ শেয়ারবাজার নিয়ে এতো সত্য বেরিয়ে এসেছে যে, নতুন করে সত্য বের করার জায়গা নেই। শেয়ারবাজারে স্পেকুলেশন হয়নি, হয়েছে ম্যানুপুলেশন।
ড. বাকি খলিলী বলেন, অনেকেই বলেন লোভ-লালসার কারণেই এ পরিণতি হয়েছিল। বাজারে লালসা থাকবে। এটাকে ঘিরেই ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থনীতি আবর্তিত। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করতেই কাজ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কারণেই পূঁজিবাজারে বাজারে এ ধরনের ধস নেমেছে।
তার মতে, ক্যাপিটাল মার্কেট আর মানি মার্কেট এক সঙ্গে মিশে গিয়েছিল বলেই বাজার ধস হয়েছিল। এখন দেখা যায়, অনেক ব্যাংকের পরিচালকই স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য। এ ছাড়া প্রায় সব ব্যাংকেই মার্চেন্ট ব্যাংক আছে।
স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের বেশীরভাগই রাজনীতিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা রাজনীতির ভেতরে নেই। কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগস্ত হয়েছেন।
ড. বাকি খলিলী বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ ডি-মিউচুলাইজেশন হলেই হবে না। সেটাকে রাজনীতি প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এ মুহূর্তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কারণে অনেকগুলো ব্যাংকের মুনাফার অনেক কমে গেছে। মানি মার্কেটকে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে আলাদা করতে হবে।
এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয় বা অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর। ফলে যা কিছু ঘটে তাতে রাজনীতির ছাপ থাকে।
রাজনৈতিক কারণেই ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সহযোগিতায় পরিচালিত এ সেমিনার সঞ্চালন করেন হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.মিজানুর রহমান। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন।
মূল প্রবন্ধে ড. হেলাল ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ফুলে ফেঁপে ওঠার বিভিন্ন কারণ খতিয়ে দেখান। তাতে ব্যাংকগুলোর বেপরোয়া বিনিয়োগের বিষয়গুলো উল্লেখ্য করে তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন।
একই সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানা ব্যর্থতাকে তুলে ধরেন। ডি-মিউচ্যুলাইজেশন হলেই বাজার স্থিতিশীল হবে না বলে মন্তব্য করেন ড. হেলাল উদ্দিন।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন