মার্জিন ঋণের অনুপাত আগামী জুলাই
থেকে কিছুটা কমবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)
কর্তৃক প্রণীত মার্জিন ঋণ নীতিমালার শর্তানুযায়ী গ্রাহককে দেয়া ঋণের হার ১ অনুপাত ১
দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে ঋণ সমন্বয় করতে হবে
মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে। এতে শেয়ারবাজারে বিক্রয়চাপ
কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে গ্রাহকরা
ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ১ অনুপাত ২ শতাংশ হারে মার্জিন ঋণ পেয়ে থাকেন।
দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন
ব্যাংকের (এডিবি) শর্তানুযায়ী গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্জিন ঋণ নীতিমালার
অনুমোদন দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। নীতিমালায় ১ অনুপাত
২ শতাংশ হার বহাল রেখে ধাপে ধাপে দুই বছরের মধ্যে ঋণের হার ১ অনুপাত শূন্য দশমিক ৫
শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এতে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ও
মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ
কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা-১৯৯৬ এবং মার্জিন
রুলস-১৯৯৯ অনুযায়ী ধাপে ধাপে মার্জিন ঋণের হার কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৩
সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মার্জিন ঋণের অনুপাত বর্তমানের ন্যায় ১ অনুপাত ২ বহাল থাকবে। অর্থাৎ গ্রাহকের
তহবিলের দুই গুণ মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। পরে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর
পর্যন্ত এর হার হবে ১ অনুপাত ১ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ওই সময়ে
গ্রাহকের তহবিলের সর্বোচ্চ দেড় গুণ মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি
থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মার্জিন ঋণের হার কমিয়ে ১ অনুপাত ১-এ নামিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ ওই সময়ে
গ্রাহকের তহবিলের সমান মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। আর এডিবির
শর্তানুযায়ী মার্জিন ঋণের হার ১ অনুপাত শূন্য দশমিক ৫০-এ নামিয়ে আনা হবে ২০১৪ সালের
১ জুলাই থেকে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের বিভিন্ন গ্রাহককে দেয়া ১২
থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার মার্জিন ঋণ রয়েছে। এ ঋণের অধিকাংশই ১ অনুপাত ২ শতাংশ
হারে গ্রাহককে দেয়া হয়েছে। এখন বিএসইসির নীতিমালা অনুসারে
মার্জিন ঋণের অনুপাত কমিয়ে আনা হলে বাজারে সাময়িকভাবে বিক্রয়চাপ বাড়তে পারে বলে
মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মার্চেন্ট ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন বাজার পরিস্থিতি
নেতিবাচক থাকায় গ্রাহককে দেয়া মার্জিন ঋণের অনুপাত নীতিমালার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে। বর্তমানে বাজার
পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বাজারে অংশগ্রহণও
বাড়িয়েছেন। এ অবস্থায় মার্জিন ঋণ সমন্বয় করতে হলে স্বাভাবিকভাবে তা
সূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এদিকে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল
পর্যন্ত মার্জিন ঋণ নেয়া গ্রাহকের অধিকাংশের পোর্টফোলিও লেনদেন অযোগ্য হয়ে পড়েছে। টানা দরপতনে
মার্জিন ঋণ নেয়া অধিকাংশ গ্রাহকের ইকুইটি ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। যদিও মার্জিন ঋণ
বিধিমালার কারণে ইকুইটি ঋণাত্মক হয়ে পড়া এসব গ্রাহকের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার
লেনদেনে ফেরাতে সংশ্লিষ্ট উপবিধিটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। বিএসইসির
নির্দেশনায় কোনো গ্রাহকের ইকুইটি ঋণাত্মক হলেই ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক
ডিস্ক্রিশনারির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পোর্টফোলিও পরিচালনার ক্ষমতা পায়। এর পরও মার্জিন
নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ গ্রাহকের পোর্টফোলিও লেনদেনে ফেরানো যায়নি।
ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট
প্রোগ্রাম-২-এর জন্য এডিবির ২১৫ মিলিয়ন ঋণ সহায়তার জন্য দাতা সংস্থাটি ২৫টি শর্ত
দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণের
বর্তমান হার কমিয়ে ১ অনুপাত শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা। এর আগে গত জুনে
বিএসইসিতে দেয়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএ মার্জিন ঋণ ১:২ অনুপাতে দেয়ার
প্রস্তাব করে। এডিবি ও বিএমবিএর দেয়া প্রস্তাব সমন্বয় করে মার্জিন
ঋণের বর্তমানের হার না কমিয়ে ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে
শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ায় বিএসইসি ১০ বার মার্জিন ঋণের হার পরিবর্তন করে। মার্জিন ঋণের হার
বার বার পরিবর্তনে বাজার প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ থেকে একটি নীতিমালা তৈরির দাবি ওঠে। মার্জিন ঋণের
নীতিমালা তৈরিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্দেশনার দেড় বছর পর তা
অনুমোদন দেয় বিএসইসি।
Comments[ 0 ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন